বাংলাপ্রেস ডেস্ক:নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পূর্বঘোষণা অনুযায়ী চলতি নভেম্বর মাসের প্রথমার্ধ তথা ১৫ নভেম্বরের মধ্যেই ঘোষণা করা হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। সে হিসাবে চলতি সপ্তাহেই আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। দিনটি হতে পারে আগামী বুধবার (১৫ নভেম্বর)। কোনো কারণে সেদিন তফসিল ঘোষণা করা না গেলে পরদিন বৃহস্পতিবারই (১৬ নভেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, তফসিল অনুযায়ী নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর সম্ভাব্য তারিখ হতে পারে আগামী ৬ বা ৭ জানুয়ারি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ এবং তফসিল নিয়ে আলোচনা চলছে গত কয়েকদিন ধরেই। তবে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন না। আজ সোমবারও (১৩ নভেম্বর) ইসিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তফসিল ও নির্বাচনের তারিখ নিয়ে। তবে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি তিনি।
ইসি সচিব বলেন, নভেম্বরের প্রথমার্ধেই তফসিল ঘোষণা হবে। প্রথমার্ধের দিন যেহেতু এখনো সামনে আছে, তাই আপনারা অপেক্ষা করুন।
বিজ্ঞাপন
তবে নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী বুধবার (১৫ নভেম্বর) তফসিল ঘোষণার চূড়ান্ত প্রস্তুতি কমিশন নিয়েছে। কোনো কারণে সেদিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা সম্ভব না হলে পরদিন বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) তফসিল ঘোষণা করা হবে। এর বাইরে যওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
সাধারণত তফসিল ঘোষণার দিন থেকে নির্বাচন পর্যন্ত ৪৫ থেকে ৬০ দিন সময় হাতে রাখা হয়। সে হিসাবে ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা হলে নির্বাচন হবে জানুয়ারির শুরুর দিকে। ৬ জানুয়ারি শনিবার অথবা ৭ জানুয়ারি রোববার ধরে নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করার তথ্য জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন সূত্র। তবে একটি সূত্র ৪ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) নির্বাচন হতে পারে বলেও আভাসও দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোমবার সন্ধ্যায় সারাবাংলাকে বলেন, নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ। এ সপ্তাহেই বুধ বা বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করা হবে। এর আগে কমিশন সভা করে দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।
আগের বছরগুলোতে কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে পরদিন তফসিল ঘোষণার নজির দেখা গেছে। এবারে একই দিনে কমিশন সভা ও তফসিল হতে পারে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যেদিন ইসির কমিশন সভা হবে, সেদিনই তফসিল ঘোষণা করা হবে।’ নির্বাচন কবে হবে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জানুয়ারির শুরুতেই নির্বাচন হবে। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’
বিজ্ঞাপন
সাধারণত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে সিইসির ভাষণটি রেকর্ড করে সেটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। তবে এবারে ভিন্ন চিত্র দেখা যেতে পারে বলে ইসির আরেকটি সূত্র জানিয়েছে।
ওই সূত্রটি বলছে, নির্বাচন কমিশনের একটি অংশ গণমাধ্যমে সরাসরি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পক্ষে মত দিয়েছে। তবে কমিশনের আরেক অংশ আগের ধারাবাহিকতায় সিইসির রেকর্ডেড ভাষণ প্রচারের মাধ্যমেই তফসিল ঘোষণার পক্ষে মত দিয়েছেন। দুপক্ষ এখনো বিষয়টি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে কমিশন সভা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী সংসদের প্রথম অধিবেশন বসার পর পরবর্তী পাঁচ বছরের আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোট নিতে হবে। সে হিসাবে গত ৩১ অক্টোবর থেকে ৯০ দিনের দিন গণনা শুরু হয়েছে। ২৮ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ছয় কোটি সাত লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন, নারী ভোটার পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। এ ছাড়াও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২ জন। নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ১০৩টি। এতে ভোটকক্ষ রয়েছে আড়াই লাখেরও বেশি।
বিপি/কেজে